CreativeartandArtist | Art & Culture

Cultivation of Art and Literature

রাধা মাধব

Written By: Jyotirmay Kundu - জুল• 07•13

RadhaMadhab

বসন্ত যে যায়
রাধিকে, বসন্ত যে যায়।
কানাই বুঝি আসবে না আর-
তোমার আঙিনায়,

সব ভুলেছ, কিছুই কি আর – মনে পড়ে না-
এ পোড়া মন কেন কিছুই ভুলতে পারে না।
একলা ছিলাম,
ভালোই ছিলাম।
কেন তুমি এলে-
দেখা হল তোমার সাথে বসন্ত বিকেলে।
আমার বন্ধু বিশাখার – তুমি কেমন দাদা।
তুমি তো মাধব – আমার নাম রাধা।
আলাপ করলে নিজেই তুমি
একা পথের ধারে।
আমার মন উথাল পাতাল
ব্যাকুল অভিসারে।

বসন্ত যে যায়
রাধিকে, বসন্ত যে যায়।
বৃন্দাবন ভুলেছে কানু
গিয়ে মথুরায়।

আমায় তুমি বলেছিলে- মনে পড়ে মাধাব।
আমি চাইলে তুমি, দিতে পার সব।
চাইনি তো কিছুই আমি, ভালোবাসা ছাড়া-
কোথায় তুমি থাকো এখন, কোন গলি-
কোন পারা।
পড়াশুনায় ভালই ছিলে গাঁ জোড়া খ্যাতি
পড়াশুনা উঠল শিকেয় আমার দিবস রাতি।
পড়তে যাবে দূর শহরে – অনেক অনেক পড়া।
কেমন করে থাকব আমি- বাঁচব আমি তোমায় ছাড়া-
বাড়ীতে সেদিন কেউ ছিল না- হটাত তুমি এলে
ভালবাসায় সব আগল ছিন্ন করে দিলে।
ছাতের ঘরে চুপি চুপি শরীরে জ্বাললে আগুন।
উদ্বেলিত হৃদয় আমার- শরীরে জুড়ে ফাগুন।

বসন্ত যে যায়
রাধিকে, বসন্ত যে যায়
মুখপুরি তোর মুখ পুড়ল
কৃষ্ণ সাধনায়।

সব দিলাম, দিলাম আমার সমস্ত উজাড় করে
ফিরে তুমি এলে না- আর, আমায় নষ্ট করে।
আমি এখন সত্যি নষ্ট -
শরীর বেচে খাই।
আমার ঘরে রাসলীলা -
শুধু মাধব নাই।
আগুন নিয়ে করতে খেলা -
কাতল যে ফাগুন বেলা,
কিসের আশায় রোজ দুবেলা
বেঁচে থাকি আমি -
আমার মাধব পর হয়েছে -
অন্য কারও স্বামী।

বসন্ত যে যায়
রাধিকে, বসন্ত যে যায়।
যতই তুমি জ্বলে মরো
জ্বলে পুড়ে ছাই-
তোমার মাধব পর হয়েছে,
মন তোমাতে নাই।।

Share

দেবতার গ্রাস

Written By: Chandan Banerjee - জুল• 03•13

kedar_Devastation

KedarNath_AfterDevastation

ঝির্ ঝিরে বৃষ্টি –মন্দিরে সন্ধ্যারতির ঘণ্টা -
সকলেই তীর্থযাত্রী – নিরুদ্বেগ নিঃশঙ্কা ।
চারিদিক নিঃস্তব্ধ – যাত্রীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
হটাত জোরে শব্দ – মেঘভাঙ্গা বাণ সে প্রচণ্ড !
গড় গড় – গর্জন – জলছ্বাস !
একি দেবতার গ্রাস ? নাকি নেহাতই দুর্বিপাক ?
বাঁচাও বাঁচাও  রব – সব চুপ চাপ – নিঃস্বার -
চারিদিকে জল আর জল – বরো বরো পাথরের ঢল -
প্রানহীন মৃতপুরী – শবের পাহাড় -
প্রাচীন এই জনপদের হল কি বিনাশ ?
ভক্তের কেদার আজ শুধুই ইতিহাস।।

Kedar Temple before devastation

Kedar Temple before devastation

Share

একা এবং একা

Written By: Jyotirmay Kundu - জুল• 30•13

AltaPori

আলতা পরীর মেঘের দেশের
মেঘ পিওনের দল-
আসবি কবে আমার বাড়ী
একবারটি বল।
প্রলম্বিত দিনগুলি আর
রাত্রিময় বিভীষিকা-
আলতা পরী কি জানো না
আজও আমি ভীষণ একা।
মেঘের ভেলায় ভাসিয়ে দিও
মেঘ পিওনের চিঠি-
বৃষ্টি হয়ে পড়ুক ঝোরে-
ঝরতে ঝরতে বাদল
নির্জন প্রবাসে শুধু খুঁজে বেড়ানো,
চেনা মুখের আদল।
চেনা চেনা মুখ গুলো সব
অচেনা হয়ে যায়।
শুধু একা – বসে থাকা
এই শূন্যতায়।

Share

St’ Valentine’s Day

Written By: Chandan Banerjee - ফেব্রু• 02•13
Add your HTML code here...

StValentinesDay

This is a Day
When St’ Valentine
Made lovers out of the den of quarantine.
We all rejoice
And pass in merry time.

This is a Day
When St’ Valentine
Made lovers out of darkness & put in front line.
Couple offer gifts
And pass in Party & Cuisine.

Share

শ্রীমতী [Srimati]

Written By: Gouri - জুল• 31•11

Srimati

রোজ সকালে এই খানটাতেই এসে বসে শ্রী। দোতলারচওড়া বারান্দায় চেয়ার টা পাতাই  থাকে।  ভোরের আলো আর হাওয়া শ্রী কে চুম্বকের  মত টানে। বারান্দারগায়ে লেগে থাকা কয়েকটি গাছ  এই  সময় শ্রীর সঙ্গী। একেবারে কাছের গাছ টি এক টি জামরুল গাছ। ভোরেরআলোয় তার ঝাকালো   সবুজ পাতারা  ঝলমল করে। একটু দূরে দুটি নারকেল গাছ পাশাপাশি। তাদের পাতারচামর দুলিয়ে হাওয়া দেয়। ওদের পাশে এক টিশিরীষ আর এক টি কনক চাঁপা।  শ্রীর ছোটবেলা থেকে ই গাছ, ফুল, নদী, পাখি ভাল লাগে। একটু দূরেগঙ্গা দেখা যায়। গাছে গাছছোট ছোট হাল্কা সবুজ রং, বুকের কাছটা সাদা, সরুছোটো লম্বা ঠোঁটের পাখীরা দল বেঁধে আসে।থেকে থেকে পিক পিক করে ডেকে এ ডালে সে ডালে উড়ে  বেড়ায়।ধীরে ধীরে সারা আকাশ , তার  অপূর্ব আলোর ছটায়ভরিয়ে দিয়ে রবি মামা হাসে।

এই  সময় চা নিয়ে আসে মালতি। “কি খাবে সকালে আজ?” –“যা হয় দে না।” মালতী দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়। খাওয়া পরা কোন দিকে তার মন যায় না। আপন মনে-আপন ভাবে থাকে। বারান্দায়  হাঁটতে হাঁটতে গুন গুন করে—“এই যে তোমার প্রেম  ওগো হৃদয় হরণ, এই যে পাতায় আলো নাচে সোনার বরণ”-

“এ ই ওঠো ওঠো কি  সুন্দর সকাল- আর তুমি ঘুমাচ্ছ?  অভিক কে ঠেলতে থাকে শ্রী। ঘুম জড়ানো চোখে অভি বলে “ওঃ শ্রী কি হচ্ছে? আর একটু  ঘুমাইনা।  তা হবে না- চলো-গঙ্গার ধারে একটু ঘুরে আসি।”  “ধুর— আমি কি তোমার মত ফুল চোর না কি! এত ভোরে উঁ হু না না।”

“ফুলচোর ফুলচোর” মনে পড়লে আজ ও শ্রী র চোখ মুখ হাসি আর লজ্জায় ভরে যায়। “এ ই যে ধরেছি- রোজ ফুল চুরি, আজ আর ছাড়াছাড়ি নেই । পেছন থেকে ‘শ্রী’ কে জাপটে ধরে বলে উঠলো। শ্রী র সঙ্গীরা সব দে দৌড়। শ্রী একা প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গেল। নিজেকে ছাড়াবারবৃথা চেষ্টা করতে করতে বলল, দাঁড়াও জ্যাঠা বাবু কে বলে দেব তুমি সিগারেট খাও”।

অ্যাঁ, আকাশ থেকে পড়ল অভিক। কি বিচ্ছু মেয়ে রে বাবা। একেবারে ডাহা মিথ্যে? শ্রী কে ছেড়ে সামনে এসে বলল, কি বললে- আমি সিগারেট খাই?

ততক্ষণে শ্রী ছুট দিয়েছে, একটু থেমে জিভ ভেঙ্গিয়ে বলল- হ্যাঁ তো সব্বাই কে বলে দেব।

এ ই নিয়ে পরে ওদের মধ্যে খুব হাসা হাসি হত। শ্রী র বিনুনি টা একটু টেনে দিয়ে অভি বলত- এ রকম দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এল কি করে?

শ্রী অদ্ভুত মুখভঙ্গী করে বলত বোকা হাঁদারামদের ঠকাবার জন্য এসব বুদ্ধি রাখতে হয় মশাই।

“কি! আমি শ্রীমান অভিক রায়চৌধুরী আমাকে হাঁদা বলা?

তা নয় তো কি? এক ই বাড়ি তে কত দিন ধরে আছি, আর ভাবলে আমি বেপাড়ার মেয়ে- ফুল চুরি করছি”-।

“ আর তোমার সঙ্গে যারা ছিল?”

“ আহা  ওরা তো আমার বন্ধু।”

“ সব ক’ টা চোর ।”

“ ভাল হবে না বলছি।”

আর কি হবে? মন্দ যা হবার তাতো হয়ে ই গেছে।” শ্রী লজ্জা পেয়েউঠে  চলে যেত।

“শ্রী তোর ফুল তোলা হল? মা ফুলের জন্য বসে আছে যে

। না সব ফুল তোলা হয়  নি। তুই ডালি টা নিয়ে যা, আমি আসছি।”

“ওরে বাব্বা আমি পারবো না। তুই দিয়ে যা” কণা বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে বলে চলে গেল।

“কণা বাগানে  আসতে চায় না কেন?’

“শুঁয়োপোকা আর বোলতার ভয়ে।”

“তোমার ভয় করে না?’

“চোরদের ভয় থাকতে নেই।”

শ্রী ফুল নিয়ে যেতে যেতে বলল-“ বড় বড় গিরগিটি আছে চলে এসো।”  অভি এক লাফে ঝোপের ধার থেকে বেরিয়ে এল, দেখে শ্রী হেসে কুটপাটী । আবার মিথ্যেকথা? উঁহু বোকা বানানো।

অভি ধরে ফেলবার  আগেইশ্রী দৌড় দিল।

কঙ্কনা- অভিকের ছোট বোন। শ্রী র  সঙ্গেএক ক্লাসে পড়ে।মিশুকে শোনহাসিখুশি।  শ্রী র মা  প্রথম প্রথম খুব সঙ্কুচিত হয়ে থাকতো। বলতো- এরা এত ধনী পরিবার এদের সঙ্গে এত মেলামেশা ঠিক না।কিন্তু অভির মা অন্য রকম মানুষ। বড় ঘরের মেয়ে, বড় ঘরের বৌ। একটু আদুরে আর একটু সুখি। সবার প্রতি মায়া, মমতা, কর্তব্য আর ভালোবাসায় ভরা মন।তিনি শ্রী র মা’র সঙ্কোচ বুঝতে পেরে একদিন নিজে শ্রী দের ঘরে এসে বসলেন, বললেন, “ কই রমা- একটু চা খাওয়াও তো।” শ্রী র মা কি করবে ভেবে পায় না। চা খেলেন, রমার হাতে বানানো জলখাবার খেলেন, সাজা পান খেয়ে বেশ আয়েশ করে বসলেন। এ কথা সে কথা বলার পর বললেন- “ তুমি এত কিন্তু কিন্তু কর কেন বোন?” আমার তোমার মত একটা ছোট বোন ছিল। তোমার মত ই মিষ্টি আর নরম স্বভাবের- নাম টাও এক রমা। বাবা রেখেছিলেন- শ্যামা আর রমা। জানো, মাত্র সাত দিনের জ্বরে দশ বছর বয়সে বোন টা আমার চলে গেল। সারাক্ষণ দিদি দিদি করত”- বলতে বলতে উন ফেললেন। শ্রী র  মা কি করবে ভেবে না পেয়ে ওনাকে জড়িয়ে – “ কাদবেন না দিদি, কাঁদবেন না” বলে নিজেও কেঁদেফেললেন। এরপর  থেকেদুই পরিবারের মধ্যে এক ভালবাসার বন্ধন তৈরি হল।

শ্রীর বাবা বললেন, “ এদের কি বাড়ি ভাড়া দেওয়া প্রয়োজন? নীচেটা একেবারে ফাঁকা- মাঝে মাঝে বিস্বেশ্বর বাবুকে আসামের চাবাগানের তদারকিতে যেতে হয়- ওনার স্ত্রী লোকজন ভালবাসেন”। রমা বলে উঠলো, হ্যাঁ দিদি সেদিন সেই কথা ই বললেন। ভাশুর জা তাদের ছেলে মেয়েরা আগে এখানেই থাকত ।মেয়েদেরবিয়ে হয়ে গেল, ছেলেরা পড়াশুনো শেষ করে বাগানের ব্যাবসা দেখার জন্য আসামে চলে গেল, দিদি আর ভাশুর ঠাকুর ও ছেলেদের কাছে চলে গেলেন। বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল, টিকতে পারি না।- তা ভগবান তোমাদের আমার কাছে এনে দিলেন। বরাবর থাকবে, আমাকে ছেড়ে কোনদিন ও যেতে পারবে না, বলে দিলুম কিন্তু।”

এদের সরকার মশাই, শ্রী র বাবা অমরেন্দ্র বাবুর দেশের লোক। বহুদিনের চেনাজানা। ওনার যোগাযোগে ই এ বাড়ীতে আসা ।আগে যেখানে থাকতেন সেখান থেকে কলেজ দূরে ছিল। যাতায়াতে অসুবিধা হত।  শ্রীর বাবা কলেজে ইংরাজিপড়ান। টাকি তে ওদের দেশ, জমি, বাড়ি ঘর সব।অনেক আত্মীয় স্বজন, অনেক শরিক।  দুর্গাপূজো ও হয়। এরা সকলে ই কয়েকবার টাকি তে গেছে।গাছপালা, পুকুর,  কাছেই  ইছামতী নদী, খুব ভাল লাগত সবার ।অভি পুকুরে খুব ঝাঁপ দিত। শ্রী প্রথম দিন দেখে ভয় পেয়ে বলল, “ জলে নেমেছ, সাঁতার জানো?”

“ও মা তুই জানিস না দাদা তো গঙ্গায় সাঁতার দেয়- এতো পুকুর।”

সত্যিইতো- ওদের বাড়ির কাছেইতো গঙ্গা। কণা আর শ্রী নীচের ধাপে বসে জলে পা ডুবিয়ে বসে গল্প করত। অভি ডুব সাঁতার দিয়ে কখনও দূরে কখনও কাছে হুস করে ভেসে উঠত। শ্রী ভয় পেয়ে যেত, কণা হাসত। যতক্ষণ না অভি জল ছেড়ে উঠত- শ্রী নড়ত না। নিরিবিলিতে   দেখা হলে  অভি বলতো, “ ভয় নেই, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। ডুবলে তোমায় নিয়েই ডুবব। গুনগুন করে কানের কাছে মুখ এনে গাইত- “রূপ সাগরে ডুব দিয়েছি অরূপ রতন আশা করি”।

শ্রী বলে, “কথা দিলে? মনে থাকবে? ভুলে যাবে না?”

না না না ।”

“আমার যে বড়ো ভয় করে।”

কেন ভয় কেন?

কি জানি কি হবে- যদি আমাদের সবাই মেনে না নেয়।

তাতে কি ? আমি সোজা তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বলবো- “ এই বন্দিনীই আমার প্রানেস্বরী।”

শ্রী খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ে বলল- কাল রাতে দুর্গেশ নন্দিনী পড়া হয়েছে বুঝি?”

“ তা কেন আমিতো আমার মত করেডায়লগ বললাম । হাসির কি হল? একটা কাজ অবশ্য হল- তোমার পেঁচার মত গোমড়া মুখে হাসি ফুটল।”

এই দাঁড়াও তো ক্যামেরা টা আনি- বনের পথে বনবালার ফটো তুলবো।।”

সেদিন শ্রীর অনেক গুলো ছবি তুলেছিল, কোলকাতায় এসে প্রিন্ট করে শ্রী কে চুপিচুপি দেখিয়েছিল। আজ  সেগুলো অভির আলমারিতে অ্যালবাম এ আছে।

দেশের বাড়ীতে কটা দিন কি আনন্দে হৈ হৈ করে কাটতো। অভির সবেতেই উৎসাহ। শ্রীর জাঠতুতো- খুড়তুতো ভাইদের সঙ্গে সারাদিন খেলা, আড্ডা, গল্প। তমালদার খুব ভক্ত হয়েছিল অভি। তমালদা- শ্রীর বড়ো জ্যাঠার ছেলে। যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন সুন্দর স্বভাব।তমালদাও অভিকে খুব ভালবেসে ফেললো। বলতো “ very brilliant and good boy”। একদিন দল বেঁধে সকলে মিলে ইছামতী নদীর ধারে পিকনিক করা হল।

তমালদা হঠাৎ বলল, এই নদীর নামে এক বিখ্যাত লেখকের এক বিখ্যাত উপন্যাস আছে। লেখকের নাম কি?”

“ বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।” সবার আগে অভি চেঁচিয়ে উঠল।

সাবাস! তুমি জানো দেখছি ।বই পড়ো?

“এই একটু আধটু।” আসলে “পথের পাঁচালী” দেখার পর ওনার কিছু বই পড়েছি।”

বাড়ীতে বই পড়ার পরিবেশ আছে?”

হ্যাঁ, আমার মা বই পড়তে খুব ভালবাসেন। শ্রী তো লাইব্রেরী থেকে অনেক বই এনে দেয় মাকে।”

তমালদা বলল, চলো সবাই নদীতে স্নান করবো। তবে কেউ বেশী দূর যাবে না।

ওরা সবাই খুব সাঁতার কেটে- খাওয়া দাওয়া সেরে হৈ চৈ করে ফিরল ।মনে হয় এই সেদিনের কথা। একদিন অভির মা ই রমার কাছে কথাটা পাড়লেন। শ্রী তখন সবে কলেজে ঢুকেছে। অভি M.Com. পড়ছে। উনি সবই বুঝতে পারতেন। মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না। ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে এটা ওটা দিয়ে আসার জন্য  শ্রীকে অভির ঘরে পাঠাতেন। অভি একটু লাজুক হেসে বলতো দেখেছ আমার মা কি রোম্যান্টিক? হাসি চেপে শ্রী বলতো হাতি। আসলে দাসিগিরির ট্রেনিং দিচ্ছেন।

কপট রাগ দেখিয়ে- “ কি বললে যাও নিয়ে যাও তোমার সরবত, খাব না। আমার এমন উদার হৃদয়া মাতৃদেবীর নামে এই সব বলা?”

“ ওরে বাব্বা  কি সব শক্ত শক্ত কথা মাথায় ঢুকছে না।”

ঢুকবে কি করে  মাথায় তো গোবর ভরা।”

“  ওহোতোমার নাম তাহলে গোবর বাবু?”

প্রথমে কথাটা ধরতে পারে না- পরে বুঝতে পেরে হোহো করে  হেসে শ্রী কে জাপটে ধরে- “ওরে মেয়ে আমাকে গোবর বলা?”  আজ আর ছাড়াছাড়ি নেই- গবরে মাখামাখি করে দেব।

অ্যাঁ মা সত্যি সত্যি তোমার গা থেকে গোবরের গন্ধ  বের হচ্ছেযে। বের হোক যা ইচ্ছা যত ইচ্ছা। বল রোজ রোজ আমাকে বোকা বানানো না?”  ঠিক এই সময় ভগ্নদূতের মত- কালুয়া-“ ছোড় ডাডাবাবু” বলে বাইরে থেকে হেঁকে উঠলো। কালুয়ার অনেক কাজের সঙ্গে একটা হল অভির গঙ্গায় সাঁতার কাটার সঙ্গীর কাজ। যাও বেঁচে গেলে- শ্রী কে ছেড়ে দিল অভি।

কালুয়া হেনাদির বিয়ের দিন যা কাণ্ড করেছিল- ভেবে এখনও হাসি পায় শ্রীর। হেনা এ বাড়ির মেজ মেয়ে। অভির পিঠোপিঠি। দুজনে খুব খুনসুটি করতো। অভির লন্ডনে পড়তে জাবার কথা উঠলেই হেনাদি বলতো-“ খবরদার শ্রী ওকে যেতে দিবিনা। ওর যা স্বভাব সুন্দরী মেয়ে দেখে পাগল হয়ে যাবে, এখন যেমন তোর জন্য। বলা যায় না একেবারে মেম নিয়ে ফিরল।”

“কি হচ্ছে কি যাঃ পালা এখান থেকে। সব সময় বাজে বাজে কথা।”- ভীষণ রেগে অভি বলল।

হেনাদি পালিয়ে গেল। শ্রী মুখে আঁচল চেপে হাসছিল।

“ তুমি হাসছ যে বড়?”

“ হাসছি কোথায়? আমি তো কাঁদছি।”

“কাঁদছ কেন?”

“ বাঃ তুমি মেম বিয়ে করে আনবে, কাঁদবো না?”

“শ্রী, তুমিও ?  যখন সত্যি সত্যি আনবো না বুঝবে।”

“ইস আমার বয়েই যাবে।”

শুধু বয়ে যায়নি, ভেসে গেছে।

গতকালই কণার ফোন এসেছিল। আগের মতই কলকল করেকথা বলে- “ এই বিশ্রী কি করছিস, চলে আয় না। কতদিন তোকেদেখি না। আমার যে উপায় নেই, ঝামেলা আর ঝামেলা। কণার দুটি মেয়ে, একটি ছেলে। সবারই পড়াশুনার চাপ। টার ওপর শ্রীর বড় ছেলে কণার কাছে থেকেই চাকরী করছে । নীল তার বাবার মতই সুপুরুষ হয়েছে। কণা জোরকরেই ওর কাছে রেখেছে। বলে আগে বিয়ে হোক, তারপর আলাদা সংসার করে থাকবি। শ্রী ও নিশ্চিন্ত, ছেলে পিসির কাছে আছে। ছোট ছেলে সানি- আমেরিকায় গেছে দুবছর হল। দু একদিন বাদ বাদ ফোনকরে-“ মা-মা আর বেশী দিন না – মাত্র একটা বছর, একটা বছর, অনেক দূর থেকে ভেসে আসে —–শ্রীর মাথা ঝিম ঝিম করে, বুকের ধুকপুকুনি থেমে যায়, সারা শরীর হিম হয়ে আসে। অনেক ক্ষণ ছুপ করে বসে থাকে।সানির কোন কথা সুন্তে পায় না।

“এই নাও মা তোমার চা।”  এই সময় স্রীমতি আর এক কাপ চা খায়- তারপরে স্নান করে ঠাকুর ঘরে। মালতী ফুল তুলে সব কিছু গুছিয়ে রাখে। জ্যাথিমার সেই ঠাকুর ঘর। কত মূর্তি, কত ছবি- সব সুন্দর করে রাখা আছে। অনেক বছর ধরে শ্রী ই এসব করে।  দীক্ষনেবারপর এখানে    ঁঠাকুর রামকৃষ্ণআর ঁমা সারদার সুন্দর বড় দুটি ছবি রেখেছে শ্রী। প্রায় ঘণ্টা খানেক লাগে পূজ্য – পাঠ সারতে। এরপর কিছু সংসারের খোঁজ খবর, কি আছে কি লাগবে, মালতী সব দেখে শ্রী কে জানায়। শ্রী কিছু দরকারি চিঠিপত্র, ব্যাঙ্কেরব্যাপার, চা বাগান থেকে আশা কাগজ পত্র দেখে, হিসাব দেখে। রাজীব আর রাহুল ভাসুরের দুই ছেলে আসামে চা এস্টেট চালায়। ওদের বৌ ছেলে মেয়ে ওখানেই থাকে। পুজর ছুটিতে সবাই ক’দিনের জন্য আসে- , তখন বাড়ীটা আনন্দে ভোরে ওঠে। অভিকের মেজ বোন হেনা, তার ছেলে মেয়েরা আসে। কণার ছেলে মেয়েরাও কোনও কোনও বাড় আসে। সবাই খুব হৈ চৈ করে। যাবার সময় সকলেই শ্রী কে সঙ্গে নিয়ে যাবার জন্য  ঝুবি চাপাচাপি করে।কিন্তু শ্রী যেতে পারে না। ওর যে এখানে অনেক কাজ। আগে যখন নীল আর সানি ছোট ছিল, মাঝে মাঝে যেত, এখন হয় না। হেনা কোলকাতাতেই থাকে। মাঝে মাঝে আসে। ওর ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার।

 

শ্রী আর কণা তখন পনের, ষোল। সদ্য ফোটা পদ্মফুল, একটি একটি করে পাপড়ি মেলছে। কণা যেন চঞ্চল ঝর্ণা, উচ্ছল হাসি খুশি প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর। আর শ্রী যেন কোন গগনের ফুল, কোন গগনের তারা। শ্রীর মুখে এক অপার্থিব দ্যুতি। শ্রীর হাসিতে, চোখের চাওয়ায়, ওর অন্তরের সরলতা- সততা- ভালবাসা, বুদ্ধির ছটা সব ফুটে ওঠে। যে ওকে একবার দেখে, দেখতেই থাকে। ওর নম্র, বিনয়ী মিষ্টি স্বভাব মুগ্ধ করে সকলকে। হেনার বিয়েতে বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন। লন্ডন থেকে বড়দিরা সবাই এসেছে।  অরুণা, শ্রী কে  দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইল- ওঃ তুমিই স্রীমতি? মায়ের চিঠি তে তোমার, তোমাদের কথা অনেক জেনেছি। শ্রী অরুণাকে প্রণাম করতে গেল- শ্রী কে বুকে জড়িয়ে ধরল অরুণা। মা’র দিকে চেয়ে বলল , এ যে স্বর্গের দেবী মর্তে এসেছে। লজ্জায় শ্রী ছুতে পালাল। বিয়ে বাড়ীতে সারাদিন কণা আর বাচ্চাগুলোর সাথে মাতিয়ে বেড়াচ্ছে শ্রী। আর  যার যখন যে ফরমাস হাসি মুখে করে দিচ্ছে। কণা আর শ্রী দুজনেই প্ল্যান করেছে ওরা হেনার বিয়েতে খুব সাজবে।  দুজনেই বেনারসি পড়েছে, শ্রী নীল আর কণা হলুদ। দুজনেই লম্বা বেণীতে বেলফুলের গোড়ের মালা জড়িয়েছে। তখন লম্বা চুলই চল ছিল। ছোট চুল কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। অরুণা ওদের সাজিয়ে দিয়েছিল। সেই প্রথম ওরা রুজ, লিপস্টিক লাগাল। অরুণা তার মুক্তোর সেটটা জোর করে শ্রী কে পড়াল। চওড়া কলার, বড় বড় কানবালা। বলল নীল শাড়ীর সঙ্গে মুক্তোই মানায়। সেই মুক্তোর সেট অরুণা আর ফেরত নেয়নি। আজও লকারে আছে। আর কণাকে বলল – তোর হলুদ বেনারসির সঙ্গে জড়োয়া সেট মানাবে। কণা তাই পড়লো।   দুজনের কপালে দুটো কু্মকুমের কল্কা টিপ দিয়ে দিল।আয়নাতে নিজেদের দেখেওরা চমকে উঠলো। দুজনে দুটো পরীর মত সারা বাড়ি, প্যান্ডেলে ঘুরছে এমন সময় বর- বরযাত্রী এসে গেল। অনেক লোক, বেশ ভিড়। কালুয়া হঠাৎ ওদের কাছে এসে বলল , “ডিডিমণি ইধার উধার মৎ যাও।” বরযাত্রীর মধ্যেযারা বরের বন্ধু অনেকেই ওদের সঙ্গে একটু হাসি ঠাট্টা করতে চাইল। আলাপ করতে চাইল। কালুয়া সব ভেস্তে দিয়ে ওদের দুজনকে কারোর সঙ্গে কথা বলতে দিল না। কড়া পাহারা দিয়ে রাখল। কণা ভীষণ রেগে গেল। বলল, “ কালুয়া বাবা ডাকছে তোমায়।”

“ নেহি বাবু বলেসেন আপ দোনো কো খায়াল রাখনে কা।”

ওরা কালুয়ার চোখ এড়িয়ে যেখানে যাচ্ছে, কালুয়া ঠিক সেখানে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক সময়  অভি ওদের দুজনকে অবাক চোখে দেখতে দেখতে কণাকে বলল, “ মা তোকে ডাকছে, আর শ্রী কে বলল, আমার রুমাল পাচ্ছি না দিয়ে যাও।”

শ্রী অভির সঙ্গে ওর ঘরে যেতেই- তুমি -  তুমি এত সেজেছ, মাথা ঘুরে যাচ্ছে। শুধু আপনারই নয় মশাই, যারা দেখছে- সব্বার। অপূর্ব চোখ মুখের ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে রইল শ্রী।

ওঃ খুব অহংকার না?

আর নিজে কি?  ধুতি পাঞ্জাবীতে মানায়  বলে- পড়া হয়েছে, আবার কেবলই মেয়েদের দিকে ঘুর ঘুর করা হচ্ছে। আমি যেন দেখিনি?

কেন করবো না? আমাকে দেখে কত মেয়ে পাগল হচ্ছে তা জানো?

তা যাও না , পাগলীদের নিয়ে রাঁচিতে।

তোমার জন্য পারছিনা। তোমার তাহলে কি হবে? অভি শ্রীর হাত টা ধরল। “ পাগল হয়েছি যে তোমার জন্য।” গুনগুন করে উঠলো- ধন্য আমি ধন্য যে, পাগল তোমার জন্য যে।

শ্রী চোখ নামিয়ে বলল, আমিও।

চলো বাবা মাকে বলি, আজই আমাদের বিয়েটা দিয়ে দিক।

শ্রী খিলখিল করে হেসে উঠলো, নাঃ মাথাটা সত্যিই গেছে।

কেন যাবে না বলতো, “ তুমি কেন এত সুন্দরী হলে?” অভি বুকের কাছে জড়িয়ে ধরল শ্রীকে। ঠিক এই সময় কালুয়া ডেকে উঠলো “ ছোড়ডাডাবাবু— আপনাকে সবাই খুঁজছে।”

নিকুচি করেছে তোর খোঁজার, মনে হয় হকি স্তিক দিয়ে ব্যাটার মাথাটা ফাটিয়ে দিই। হতচ্ছাড়া জানল কি করে আমি এখানে? গজগজ করতে করতে চলে গেল অভি। শ্রী একা ঘরে ছুপ করে বসে রইল। সেই শুভদিনটির কল্পনাকরে ওর বুকের ভেতর উথাল পাথাল করে উঠলো। কেন যেন শ্রীর মাঝে মাঝে একটা ভয় উঁকি মারে, এত সুখ সইবে তো?

বিদেশ যাবার আগে অভি আসাম গেল সবার সাথে দেখা করতে। যতদিন না আসাম থেকে ফিরে এলো- শ্রীর রাতের ঘুম, নাওয়া খাওয়া সব প্রায় থেমে গেল। শ্রীর মা একদিন বলল, “ কিরে কি হয়েছে তোর মা? মুখটা এমন শুকিয়ে আছে। ভাল করে খাচ্ছিস না, কি হয়েছে আমায় বল।”

শ্রী মাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললো। “আসামে–আসামে– গোলমাল— ও গেছে, ভীষণ ভয় করছে।” থেমে থেমে কাঁদতে কাঁদতে বলল শ্রী। রমা মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে বলল, “পাগলী মেয়ে আমার কোনও ভয় নেই। আজই তো তোর বাবার কাছে খবর এসেছেগ। গোলমাল অনেকটা মিটে গেছ। আর দু- চার দিনের মধ্যেই এসে পড়বে। সত্যি, ক’দিন বাদে অভি এসেই “কাকিমা কেমন আছেন বলে ঘরে ঢুকল।”

এই তো এসে গেছ, ভাল আছ তো!”

অভির চোখ তখন শ্রী কে খুঁজছে। দেখল পাসের ঘরে জানলার শিক ধরে শ্রী- বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভির গলা শুনেএদিকে ফিরল – শ্রীকে দেখে চমকে উঠলো অভি, একি! অসুখ করেছে নাকি? অভি কাছে গেল, শ্রী সব কিছু ভুলে ওকে জড়িয়ে ধরে হু-হু করে কেঁদে উঠলো।

আরে আরে কি হল। এরকম করলে চলবে নাকি? আর কদিন পড়েই তো আরও দূরে যাচ্ছি, তখন?

“ তুমি যাবে না”। “ আচ্ছা পাগল মেয়ে তো। এদিকে অন্য সময় কত সাহস বড় বড় কথা- এখন সব ব্যবস্থা ঠিক হয়ে গেছে আর না গেলে চলবে? সবাই হাসাহাসি করবে না? এছাড়া তোমার আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভেবে দেখ। শোন, শোন লক্ষ্মীটি, কটা তো বছর, দেখতে দেখতে কেটে যাবে তারপর ফিরে এসে তখন-

“ প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে

পাল তুলে দাও -দাও-দাও।”

ওরা চমকে দোরের দিকে চেয়ে দেখে কণা নাচের মুদ্রা করে গাইছে। তিন জনেইহো-হো করে হেসে উঠলো

দেখতে দেখতে অভির যাবার দিন এসে গেল। এর মাঝে একদিন তমাল দা হঠাৎ উপস্থিত। সে বিয়ে করছে। সেই খবর দিতে – সবাই হৈ হৈ করে উঠলো। অন্তু বলল- তুমি আর কদিন আগে বিয়ে টা করতে পারলে না? ইস আমি থাকতে পারবনা। খুব খারাপ লাগছে। শ্রী কে অনেক বুঝিয়ে সাহস দিল তমাল দা। অভি রওনা হলেই  তোরা সবাই চলে আয়। যেতেও হল সবাইকে। বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ তে কটা দিন শ্রীর মনের ভার কিছুটা লাঘব হল। এরপর শ্রীর পড়াশুনোয় বেশী করে মন লাগাল। ইংলিশ এ অনার্স নিল। নিয়মিত চিঠি আসে, শ্রীর উত্তর যায়। তখন  মোবাইলের কথা কেউ শোনেই নি। থাকলে কি বেশী ভাল হত?  চিঠিতে অনেক কথা বলা যায়। মনের সব ভাবাবেগ কে প্রকাশ করা যায়। আজও অভির লেখা সব চিঠি অতি যত্নে রাখা আছে। তমাল দা আর বৌদি প্রায়ই আসত তখন। ওরা কদিনের জন্য আসত, শ্রীর মন ভাল রাখবার জন্যই আসত।

তারপর সেই সাংঘাতিক খবর আর ছেলে দুটিকে নিয়ে তমাল দাএকদিন এল। বড়টির তিন বছর আর ছোটটির সবে ছ’মাস। তমাল দা কে দেখে চমকে উঠলো সবাই যেন ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া হাল ভাঙ্গা এক নৌকো। ছোট ছেলেটিকে শ্রীর কোলে তুলে দিয়ে , বড়টিকে কাছে দিয়ে বলল, “ তোর বৌদি বারে বারে বলে গেছে, তোকেই যেন এদের দিয়ে দিই। নাহলে ওর আত্মা শান্তি পাবে না। তুই ওদের সত্যি মা হবি”। -মা খুব খুশি হলেন।  আজ এত দিন হয়ে গেল—- শ্রীর কোল তো—- এ যে ভগবানের প্রসাদ—- তুমি এদের মানুষ করো। আমাদের বুক ভরা থাকবে।

আজ  পঁচিশ বছর হয়ে গেল। তখন মাঝে মাঝে হঠাৎ করে তমাল দা আসতো। কেমন যেন একটা ভাবসাব। সবাই’র কত অনুরোধ উপরোধ কিন্তু তমাল দা হেসে বলতো – আর বন্ধন নয়,  মুক্তি-মুক্তি। ইদানীং খুব কমই আসে।

হৃষিকেশে এক আশ্রমে আছেন। স্বামী অসিমানন্দ। গৈরিক বসনে, উত্তরীয়তে যেন এক জ্যোতির্ময় পুরুষ। শ্রীর প্রেরণা- আদর্শ- শান্তি আর আনন্দের উৎস।

সত্যম্ – জ্ঞানানন্তম্ – আনন্দম্

ব্রহ্ম , শ্রী পেয়েছ? সেই অনন্ত আনন্দের স্বাদ? পেয়েছি দাদা পেয়েছি। এ কথা বলার সময় এক অপূর্ব জ্যোতি প্রকাশ পায় শ্রীর মুখে। একদিকে শ্রীর বিশাল সংসার, আর এক দিকে ওর নিজের জগৎ। বাড়ীর নীচতলাতে দুটো ঘরে একটা বেবি ক্রেশ করেছে। এখানে লকের বাড়ীতে  কাজ করে যে সব মায়েরা  তাদের ছোট বাচ্চাদের রাখা হয়। বাচ্চা কোলে  লোকের বাড়ীতে কাজ করতে যে কত কষ্ট। বাচ্চাদের বেশী কষ্ট। সব খরচ দায় দায়িত্ব শ্রীরই। এদের দেখার জন্য মেয়েদের রাখা হয়েছে, এরা একটু লেখাপড়া জানে। শ্রী নিজে এদের নানারকম ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করেছে। নীচে অফিস ঘর আছে। অন্য ঘরগুলিতে রান্না-বান্নার ব্যবস্থা আর দশ-বারো জন অনাথা বৃদ্ধা আছেন।  শ্রী রোজ গিয়ে সব দেখাশোনা করে। এদের নিয়ে শ্রীর জগত। এখানে শান্তি পায়, নিজেকে ধন্য মনে হয়।

নীল আর সানি বড় হয়ে গেল। অনেক সময় হাতে। প্নেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল, এতদিনে সফল হয়েছে।

মোবাইল বেজে উঠলো- ভাসুরের মেয়ে, ব্যাঙ্গালুরু তে থাকে। – “ কাকিমা, কেমন আছ? ক’দিন তোমার সঙ্গে কথা হয়নি। তোমার নাতি, নাতনী দের নিয়ে ব্যস্ত ভীষণ। তুমি কিন্তু রাগ করতে পারবে না। কতদিন তোমায় দেখিনি, বড্ড মন কেমন করে। তুমি শরীরের যত্ন নিও। ভাল থেকো।” শ্রী অনেকক্ষণ ওর সাথে কথা বলল।সবার ঘরে এসে আপন মনে বলে – বেশ আছ, কোনও দায় দায়িত্ব নেই, যত ঝক্কি সব আমার।  দেওয়ালে, টেবিলে অভির নানা ছবি। ছবিগুলো দেখে আর বলে।

অভির লন্ডন থেকে ফেরার আগে চিঠি এল – ‘ শ্রী আর মাত্র কয়েকটা দিন। আমরা ক’জন বন্ধু মিলে বেড়াতে যাচ্ছি। পড়ার চাপে দেশটার কিছুই তো দেখা হয়নি। যাবার আগে একটু ঘুরে নি। তুমি অভিমান করো না, তোমাকে নিয়ে আবার আসব, তখন অনেক ঘুরবো। তোমাকে ছাড়া বেড়াতে একটুও ভাল লাগবে না, বুঝতেই পারছ। কিন্তু দিদিদের আর বন্ধুদের পিড়াপীড়িতে যেতে হচ্ছে। আজ এই পর্যন্ত -

“ তোমারেই শুধু ভালবাসিয়াছি

যুগেযুগে অনিবার-

জনমে জনমে শতরূপে শতবার-

তোমারই – তোমারই – তোমারই

       আমি।”


বাড়ীতে ধুম পড়েগেল, দিদিরাও সঙ্গে আসবে।একেবারে বিয়ে কাটিয়ে যাবে। দিনক্ষণ স্থির, সাজ সাজ রব। বাড়ীতে নতুন করে রং হচ্ছে। কণা সারাদিন নানা প্ল্যান প্রোগ্রাম করছে, শ্রীদের বাড়ীতেও গোছগাছ শুরু হয়েছে। তমাল দা আর বৌদি প্রায়ই আসছে। হেনাদি আর অনুপদারা কতদূর কি হচ্ছে, খোঁজ নিতে আসছে ।  হঠাৎ বড়দি চিঠি দিল – অভিরা এখনও বেড়িয়ে ফেরেনি। কেন যে দেরি করছে তা  ও জানাচ্ছে না। চিন্তায় আছি। যাইহোক পরে সব জানাচ্ছি। সকলেই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। বড়দি, বড়জামাইবাবুর সঙ্গে সমানে যোগাযোগ করে খবর নেওয়া হচ্ছে, সেই একই খবর, এখনও ফেরেনি। দিন চলে গেল,  যাদের সঙ্গে গেছিল তারা ফিরে এসেছে কিন্তু অভির দেখা নেই। বন্ধুরা বলল , ওকে খুঁজতে গিয়ে ওদের ফিরতে এতদিন দেরি হল। থানা, পুলিশ, হাসপাতাল সব হচ্ছে, কোনও খবর নেই। জেঠিমাকে জানান হল, অভি খুব ভাল একটা অফার পেয়ে, জার্মানি  গেছে, কিছুদিন পর ফিরবে। উনি কি বুঝলেন কে জানে। একেবারে শয্যা নিলেন। শ্রীর বাবা, মা, জ্যেঠামশাই, আসামের দাদারা, কাকাবাবু সবাই সারাদিন চিন্তা ভাবনা আর পরামর্শ করছেন। একবার বড়দি জানাল অভির খুব অসুখ হয়েছে, তাই এখিন আসতেপারছেনা। কোনও খবরের সঙ্গে কিছু মিল নেই। শ্রীর মা তমাল কে আড়ালে ডেকে বললেন, “ সত্যি করে বলতো বাবা কি হয়েছে। আমার শ্রী যে শেষ হয়ে যাবে। তমাল কি বোঝাল জানা গেল না। কি হচ্ছে না হচ্ছে শ্রী  কিছুই বুঝতে পারছে না। কতদিন কেটে গেল তারও হিসাব করতে পারছে না। ধীরে ধীরে ওর ভেতরে একটা পরিবর্তন দেখা গেল। কান্নাকাটি করে না, কিছু খোঁজ নেয় না, মনে মনে একটা কাঠিন্য আর জেদ জমা হতে থাকলো।

 

নাঃ এভাবে হেরে যাব না। ভাগ্যের কাছেও না,  ভগবানের কাছেও না। ‘ও’ আসবেই। ওকে আসতেই হবে। না আশা পর্যন্ত কথাও যাব না, পরলোকেও না। দিন, মাস, বছর, দু বছর, তিন বছর চলে গেল। বাড়ীতে অভির কথা আর ওঠেনা। সবাই কিছু একটা বুঝেছে। কণাও মাঝে মাঝে বলে ওঠে, এটা ছোড়দার খুব অন্যায়, খুব অন্যায়। তারপর শ্রীকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদে। শ্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলে, “ ও কি ভেবেছে? ওকে ছাড়া আমাদের জীবন থেমে যাবে? আমি মরে যাব? মোটেও না। আসতে ওকে হবেই হবে। দেখিস কণা, ‘ও’ ঠিক আসবে।”

সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেও শ্রীকে বিয়েতে রাজী করাতে পারল না। শ্রীর সেই এক কথা ‘ও’ আসবে, ঠিক আসবে।

সেই প্রথম দুঃসংবাদের বজ্রাঘাতে তার সব ভয়, সব শঙ্কা  কেটে গেছে। সে গুনগুন করে, “ তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”।

মনে মনে বলে, দুঃখের বেশে এসেছ বলে- তোমায় নাহি ডরিব হে,

যেথায় ব্যথা, সেথায় তোমায় নিবিড় করে ধরিব হে।

কণার বিয়ে হল। দিল্লী চলে গেল। শ্রীর  জীবনে আর শূন্যতা এলো। শ্রীর বাবা, মা টাকি চলে গেলেন। শ্রী কিছুতেই গেল না। জ্যাঠা মশাই, জেঠিমা বললেন, থাক ও আমাদের অভির বৌ হয়েই থাক।

এই সময় নীল আর সানি এলো । শ্রী সমস্ত মন দিয়ে ওদের মানুষ করতে মেতে উঠলো। একে একে, আগে জেঠিমা তারপরে জ্যাঠা বাবু চলে গেলেন। শ্রীর যতদিন পেরেছেন আসতেন, ধীরে ধীরে তাদের আসাও কমে গেল।একদিন এ জগৎ ছেড়ে ভগ্ন হৃদয়ে চলে গেলেন তারা। শ্রীর নিজের দাদা আর ছোট ভাই দুটি আসে। যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। শ্রী ও তার সংসার নিয়ে, ছেলেদের নিয়ে, ভাগ্নে,ভাগ্নি আরও সব আদরের ছোটদের নিয়ে ব্যাপৃত। এছাড়া তার নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আছে।

ইদানীং শ্রীর শরীরটা তত ভাল যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে বুকে একটা ব্যাথা হয়। কাউকে বলেনা। শুধু অভিকে বলে,-“  আর দেরি করো না, এবার এসো, তোমার শ্রীর  আর বেশী সময়  নেই।”

তমালদা বলতেন,” তুমি যে শ্রীমতী, – সেই ব্রজের শ্রীমতীশত বরষের  বিরহ সয়ে ছিলেন তার কৃষ্ণ প্রেমের জন্য, তোমাকেও যে সইতে হবে, নইলে কেমন করে তোমার প্রেম, পরম পাওয়া পাবে? তোমার প্রেমাস্পদ আর অনন্ত প্রেমের দেবতা এক হয়ে যাবে ?

দিল্লী যেতে হবে। কণা- নীলের জন্য পাত্রী দেখেছে। এবার শ্রী কে গিয়ে দেখে, স্থির করতে হবে।

শ্রী কণাকে বলল, “ তুই সব ব্যবস্থা করনা,  আমি এসবের কি বুঝব?”

“ তা হবে না  , তুমি ছেলের মা,।

অগত্যা একদিন শ্রীকে যেতেই হল। এখানে শ্রীর প্রতিষ্ঠান, অফিসের কাজ দুটি ছেলে, শঙ্কর আর রাজু সব কিছু দেখাশোনা করে। ওরা দুজনে শ্রী কে প্লেনে তুলে দিল। দিল্লীতে নীল এয়ার পোর্টে ছিল। কণা শ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ তুই এখনও কত সুন্দর আছিস, না বরং আরও জ্যোতির্ময়ী হয়েছিস।” শ্রী মৃদু হাসল। নীল অনেকদিন

পরে  মাকে পেয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। পাত্রী দেখে খুশি হল শ্রী। কণার ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে সে নিশ্চিন্ত। দু মাস পড়ে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। এবার শ্রী ফিরবে, তার আগে তমালদার সঙ্গে একবার দেখা করা দরকার। শ্রী কণার গাড়ীতে একাই হৃষীকেশ রওনা হল। চেনা ড্রাইভার কোনও চিন্তা নেই। দুদিন পরে দিল্লী ফিরে কোলকাতা রওনা হবে। শ্রী বলল , কয়েক ঘণ্টার তো জার্নি, তম্রা চিন্তা করো না। পৌঁছেই জানাব। তাছাড়া তমালদা রয়েছে। কি আর করা, শ্রীকে একাই ছারতে হল। কণা বারে বারে বলে দিল, একদম দেরী করবি না। দুদিনের মধ্যেই চলে আসবি। তোকে বিশ্বাস নেই, হয়ত ওখানেই ভজন, পূজনে মেতে আর আসলি না।

শ্রী বহুবার হৃষীকেশ যেতে চেয়েছে কিন্ত্য প্রতিবারই তমালদা বাধা দিয়েছে। হাসতে হাসতে বলেছে, “ আরে দাঁড়া না, সময় হলে আমি নিজেই তোকে নিয়ে যাব। একেবারে বরাবরের জন্য। আমরা দুই ভাইবোন  খুব মজা করে থাকবো, আর সে অনেক কথা, অনেক ব্যাপার, তখনই দেখতে পাবি।

শ্রী আগে থেকে জানায়নি, গিয়ে সব কথা বলবে। শত হলেও নীল তার ছেলে। বেশ ভোর ভোর রওনা হল, যাতে দুপুরের আগে পৌঁছতে পারে। এখন শহর ছাড়িয়ে গাড়ী চলেছে। দুপাশে সুন্দর প্রকৃতির শোভা, শ্রীর বেশ ভাল লাগছে। গাছপালা, নদী, পাহাড় এসব চিরদিনই শ্রীকে টানে। অভিক ও প্রকৃতিকে খুব ভালবাসত। প্রায়ই নানা জায়গায় বেড়াতে যেত ।  স্কুল কলেজের ছুটি হলেই যেত।  শ্রীও তখন ওদের দেশের বাড়ীতে যেত। বেড়িয়ে ফেরার পথে অভি টাকিতে হাজির হত। হৈচৈ করে মাতিয়ে দিত সবাইকে।সবেতেই তার আনন্দ। তমালদা তাই অভিকে ‘ এই যে আমাদের আনন্দরাম কোথায়?’ শ্রী  আড়ালেমজা করে বলতো আনন্দরাম না ভ্যাবাগঙ্গারাম?

আর নিজে কি? বিচ্ছিরি ভীতু বুড়ি।

তমালদা একদিন শ্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলেছিল, “ তুই যেমন শ্রীময়ী, আমাদের অভিও তেমন আনন্দরাম। আমার এত ভাল লাগে- ভগবান তোদের দুটিকে অনেক যত্নে গড়েছেন।

সেই আনন্দের হাট কেন এমন করে ভেঙ্গে গেল তমালদা? আমাকে বলতে, শ্রী রাধা তুমি। প্রেমের তপস্যা করছ। বোন তোমার কাছেই শিখেছি, প্রেমকে কি ভাবে বিশ্ব প্রেমের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয়। আমি নিশ্চিত জেনেছি ঈশ্বর তোমায় কত ভালবাসেন।তাই তো তোমার প্রেম, ঈশ্বর প্রেমে দীপ্ত হল।”

অসিমানন্দ,- তুমি জানো না আজও তোমার শ্রীরাধা, ব্রজের শ্যামকে তোমার আনন্দরামের সঙ্গে একাকার করে রাখে। আজও তার জন্য শবরীর প্রতীক্ষায় প্রতি পল কাটায়। একবার শুধু একবার তাকে কাছে পেতে চায়, দেখতে চায় সাধারণ এক নারীর মতই। আজও যে তোমার শ্রী, শ্রীমতী হয়ে উঠতে পারেনি।

আমরা পৌঁছে গেছি মাতাজি। শ্রী নিজেকে সাম্লে নিয়ে ধীরে ধীরে নামলো। রাম ভাই এলো, অল্পবয়সী ব্রহ্মচারী। ও শ্রীকে চেনে। একবার কোলকাতায় শ্রীর   বাড়ীতে গেছিল। তমালদাই কিছু কাজে পাঠিয়েছিল। শ্রীকে দেখে ভীষণ খুশি হল।

আসুন মা, আসুন মা বলে দোতলায় নিয়ে গেল। শ্রীর ছোট ব্যাগটা হাতে করে এনে দিয়ে একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন ঘরে বসাল। লাইট, পাখা চালিয়ে দিল। থাকবেন তো কদিন?

না-না আমাকে কালই দিল্লী যেতে হবে। উনি কই।

স্বামীজি একটু বাইরে গেছেন, এখনই এসে জাবেন। আপনি বসুন মা। বিশ্রাম করুন, আমি আসছি। শ্রী কলঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বসলো। বেশ জায়গাটা, যেন তপোবন। রাম ভাই এলো, চা আর পুজোর ফল, মিষ্টি প্রসাদ নিয়ে। “ ড্রাইভার জি কে নীচের ঘরে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা জলখাবারও দিয়ে দিয়েছি।” কটা দিন থাকতে পারতেন মা, ভালোলাগত।  শ্রী একটু হাসল।

এইতো দালানের ওদিকেই স্বামীজির ঘর । তার পাশের ঘরটাতে আর একজন সাধু মানুষ থাকেন। বসুন মা আমি একটু আসছি। ‘ও’ স্বামীজির ঘরের দিকে চলে গেল। একটু পরে এসে বলল, “ ঐ ঘরে যিনি আছেন , বড় অসুস্থ। আমি  আজ পনেরো বছর এখানে এসেছি, তারও আগে । ধরুন প্রায় পঁচিশ বছর আছেন। বড় দুঃখের কথা , খুব বিদ্বান, বড় ঘরের ছেলে ছিলেন। তিরিশ বছর  আগে একটা দুর্ঘটনায় উনি একেবারে জীবন্মৃত হয়ে যান। অনেল চিকিৎসা করে পাঁচ বছর পরে একটু সুস্থ হন। তখন স্বামীজি ওনাকে নিয়ে আসেন। সেই থেকে এখানেই আছেন। আগে তো হাঁটা চলা  কিছুই পারতেন না, এখন একটু একটু পারেন। কিছু কিছু লেখেন, বই পড়েন। এতদিন ওনার সব সেবা শুশ্রূষা স্বামীজি করতেন, এখন আমি করি। বড় ভাল মানুষ জানেন, এই আনন্দ স্বামী।

শ্রী স্বপ্নাবিষ্টের মত উঠে দাঁড়াল। পায়ে পায়ে সেই ঘরের দিকে এগিয়ে গেল, দরজাটা ধরে একটু থেমে, তারপর তার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বিছানায় হেলান দিয়ে কোমর পর্যন্ত চাদরে ঢেকে বসে আছেন। শ্রী খাতা, ওর পাশে বসলো, এক দৃষ্টে চেয়ে রইল। দীর্ঘ বছর পরে শ্রীর বুকের বন্ধ উৎস মুখ খুলে অবিশ্রান্ত অশ্রু ঝরতে লাগলো।

সেও চেয়ে রইল , যেন দূ-উ-র কোন আকাশ থেকে দেখছে। শ্রী প্রথমে তাঁর মাথাতা ছুলো, হাতবোলাতে লাগলো খুব ধীরে ধীরে। কপালে, গালে, চোখে তার নরম আঙুল বোলাতে লাগলো। নিজেও কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। ঝুঁকে দু হাত দিয়ে এবার তাঁর গলা জড়াতে চেষ্টা করলো। মুখটা নামিয়ে , মাথাটা পাশ করে তাঁর বুকে রাখল। আনন্দ স্বামী তাঁর দুর্বল ডান হাত টি ধীরে ধীরে শ্রীর পিঠের পরে রেখে শিশুকে আদর আর আশ্বস্ত ক্রার মত বুলতে লাগলেন। দুটি চোখ বুজে রইলেন। দু চোখের কোনা বেয়ে জল নেমে এলো। অনেকক্ষণ পরে চোখ মেলে দেখেন অসিমানন্দ চোখে মুখে এক তৃপ্তির হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি অতি ধীরে বললেন, “ স্বামীজি, শ্রী আর এ জগতে নেই।” বহু বছর পরে এটাই তাঁর প্রথম আর শেষ কথা ছিল।

Share